বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

এই শীতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল

এই শীতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল

ছুটি কাটানোর জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে চান? হাতে ২-৩ দিন সময় নিয়ে বেড়ানোর জন্য চমৎকার জায়গা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। চা বাগানের সারি সারি টিলা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্যের অপরূপ সৌন্দর্য। এ নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে বেড়ানো যায় বারো মাসজুড়েই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সাইফুর রহমান তুহিন-

এখানে যেমন বনভূমি রয়েছে; তেমনি রয়েছে হাওর আর বিল। পাশাপাশি আদিবাসী খাসিয়া, মণিপুরী, গারো, টিপরা-এদের বাড়িঘরও রয়েছে। চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জনপদের সাথে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে সারাদেশের। চা, রাবার, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠের জন্য শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি ব্যাপক। দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদভারে সারাবছর মুখরিত থাকে।

tea-

শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা জাদুঘর, টি রিসোর্ট, ডিনস্টন সিমেট্রি, চাকন্যা ভাস্কর্য, নির্মাই শিববাড়ি, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন, খাসিয়াপুঞ্জি, টিপরা পল্লি, মণিপুরী পাড়া, গারো পল্লি, নীলকণ্ঠ টি কেবিন, বার্নিস টিলা, গলফ কোর্স, পাখি বাড়ি, বাদুর বাড়ি, লালমাটি পাহাড়, রাবার বাগান, আনারস বাগান, মাধবপুর লেক, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল প্রভৃতি।

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে দেশি-বিদেশি কোম্পানির ছোট-বড় প্রায় ৪৪টি চা বাগান। শহরের প্রবেশদ্বারে আপনাকে স্বাগত জানাবে চাকন্যা ভাস্কর্য। চা বাগানের লেকগুলোর সৌন্দর্যও উপভোগ্য। জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণি ও নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। মিশ্র চিরহরিৎ এ বনভূমিতে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির জীব। রয়েছে ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর প্রাণি, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি, ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি।

tea-

পৃথিবীর যে চারটি দেশে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক দেখা যায়, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ উল্লুকের বৃহত্তম আবাসস্থল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পাখি দেখার জন্যও এটি যেন এক স্বর্গোদ্যান। তাই জায়গাটি শুধু এখন পর্যটক আকর্ষণই নয়, রীতিমতো প্রাকৃতিক গবেষণাগার। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যা গবেষকরা গবেষণার জন্য এখানে আসেন।

উদ্যানের পাশেই রয়েছে দুটি খাসিয়া পুঞ্জি। তাদের আবাসস্থল টিলার ওপর এবং জীবিকা পান চাষ। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে লাউয়াছড়ার অবস্থান। লাউয়াছড়া যাওয়ার পথে চোখে পড়বে বধ্যভূমি-৭১, নয়নাভিরাম চা বাগান, টি রিসোর্ট, লেবু বাগান, আনারস বাগান প্রভৃতি। লাউয়াছড়ার প্রবেশ পথে শুনতে পাবেন ঝিঁ-ঝিঁ পোকার অবিরাম শব্দ এবং গাছে গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করতে প্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও ছাত্রছাত্রীদের ১০ টাকা, পিকনিক স্পটে প্রতিজন ১০ টাকা এবং বিদেশিদের ৫ ডলার পরিশোধ করতে হয়। প্রবেশ পথে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। উদ্যান ঘুরে দেখার ক্ষেত্রে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় রয়েছে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

tea-

শ্রীমঙ্গলের সুবিশাল হাইল হাওরের নীল জলরাশি, বিভিন্ন রঙের পদ্মফুল ও মাছের খেলাও কম আকর্ষণীয় নয়। হাইল হাওরের অভ্যন্তরে ১০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বাইক্কা বিল অবস্থিত। এ বিল শুধু মাছের জন্যই নয়, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণির জন্যও নিরাপদ আবাসস্থল। শীতে বাইক্কা বিলেই বসে অতিথি পাখিদের মিলনমেলা। ডিঙি নৌকায় চড়ে বাইক্কা বিলে ঘুরে বেড়ানো মনে এনে দেবে স্বর্গীয় অনুভূতি।

শ্রীমঙ্গলের আরেকটি আকর্ষণ মাধবপুর লেক। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লেকটি কমলগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত হলেও শ্রীমঙ্গল থেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটক স্থানটি দেখতে যান। ছবির মতো সুন্দর এই মনোরম লেকের জলে রয়েছে গোল গোল পাতা আর তারই ফাঁকে ফাঁকে ফুটে রয়েছে নীলপদ্ম। এখানে অবস্থানকালে নাম না জানা বুনো ফুলের মৃদু ঘ্রাণ আপনার মনকে প্রফুল্ল করবে।

শ্রীমঙ্গল শহরের মিশন রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন এখানকার অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ। একসময় এটি সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত ছিল। এখানে গেলে দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণি। দেশের যেকোনো স্থান থেকে সড়ক ও রেলপথে সহজেই শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। থাকার জন্য এখানে রয়েছে হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস। কম খরচে থাকার জন্যও হোটেল আছে। শীতকালে অগ্রিম বুকিং দিলে ভালো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech